স্বামী বিবেকানন্দের সংক্ষিপ্ত জীবনী pdf -Swami Vivekananda Biography In Bengali

আজকের এই নিবন্ধে ভারত তথা বিশ্বের সবচেয়ে বুদ্ধিমান ব্যক্তি স্বামী বিবেকানন্দের সংক্ষিপ্ত জীবনী pdf (Swami Vivekananda Biography In Bengali) সম্পর্কে আলোচনা করেছি। স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর সারা জীবন অধ্যাত্বিক ধার্মিক জ্ঞানের মাধ্যমে সমস্ত মানবজাতিকে একটি নতুন পথের দিশা দিয়েছেন। এছাড়াও তিনি সারা পৃথিবীর সামনে ভারতের সংস্কৃতি তুলে ধরেছিলেন। তাই প্রতিটি ভারতীয়দের স্বামী বিবেকানন্দ এর জীবনী অন্ততঃপক্ষে পড়ে নেওয়া দরকার।

স্বামী বিবেকানন্দের সংক্ষিপ্ত জীবনী pdf -Swami Vivekananda Biography In Bengali

পুরো নাম স্বামী বিবেকানন্দ
আসল নাম নরেন্দ্রনাথ দত্ত
ডাকনাম নরেন
জন্ম ১২ই জানুয়ারী, ১৮৬৩ সাল
জন্মস্থান কলকাতা, বাংলা
পিতার নাম বিশ্বনাথ দত্ত
মাতার নাম ভুবনেশ্বরী দেবী
জাতীয়তা ভারতীয়
ভাই/বোন ৯ জন
শিক্ষা বিএ পাশ
গুরু শ্রীরামকৃষ্ণ
প্রতিষ্ঠাতা রামকৃষ্ণ মঠ এবং রামকৃষ্ণ মিশন
মৃত্যু ৪ঠা জুলাই, ১৯০২ সালে

স্বামী বিবেকানন্দের ছেলেবেলা ও পরিবার

১৮৬৩ সালের ১২ই জানুয়ারী ব্রিটিশ ভারতের কলকাতার সিমলার এক হিন্দু কায়স্থ দত্ত পরিবারে ভারতের মহান সাধক স্বামী বিবেকানন্দ জন্মগ্রহণ করেন। স্বামী বিবেকানন্দের আসল নাম নরেন্দ্রনাথ দত্ত। এবং তাঁর পিতার নাম হলো বিশ্বনাথ দত্ত, যিনি কলকাতা হাইকোর্টের একজন বিশিষ্ট আইনজীবী ছিলেন এবং তাঁর মাতা হলেন ভুবনেশ্বরী দেবী।

স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর কলকাতার বাড়িতে ৬জন ভাইবোনদের সাথে বড় হয়েছেন। বিবেকানন্দকে তাঁর আত্মীয়স্বজন এবং পাড়ার লোকেরা তাঁর ডাকনাম নরেন বা বিলে বলে ডাকতেন। স্বামীজী তাঁর বাবা কাছে ছোটবেলায় পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করেন। এবং তাঁর মায়ের কাছে ভারতীয় ধর্ম ও সংস্কৃতি সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারেন। এবং স্বামীজী ছোট থেকে তাঁর মায়ের সাথে ভগবানের ভক্তি ও ধ্যানে হারিয়ে যেতেন। নরেন্দ্রের শৈশব থেকেই ভগবানকে নতুনভাবে জানার এবং পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা জেগে উঠেছিল।

স্বামী বিবেকানন্দের শিক্ষাজীবন

স্বামীজীর প্রাথমিক শিক্ষার শুরু তাঁর মায়ের কাছে থেকে হয়। যেখানে তাঁর মাতা ভবনেশ্বরী দেবী তাঁর নরেনকে বাংলা এবং ইংরেজি বর্ণমালার সাথে অবগত করান। তাঁর নরেন অল্প সময়ের মধ্যে শিখে ফেলেন। স্বামীজির বয়স যখন মাত্র আট বছর বয়স, তখন তাঁকে প্রাথমিক শিক্ষার লাভ করার জন্য ১৮৭৭ সালে মেট্রোপলিটন ইন্সিটিউশনে ভর্তি করা হয়।

যেখানে তিনি ১৮৭৯ সালে প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষা পাশ করে প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। যার পরে তিনি ১৮৮১ সালে এফ, এ এবং ১৮৮৪ সালে দর্শন নিয়ে বিএ পাশ করেন। স্বামী বিবেকানন্দ পড়াশোনা চালানোর সময়কালে তাঁর মিত্র সুরেন্দ্রনাথ মিত্রের বাড়িতে পরমপুরুষ শ্রীরামকৃষ্ণের সঙ্গে সাক্ষাৎ ঘটে। যাকে দেখে তিনি পরবর্তীকালে

স্বামী বিবেকানন্দের কর্মজীবন

স্বামীজী তাঁর বাল্যকাল থেকেই ছোটবেলা থেকেই স্বামী বিবেকানন্দ অত্যন্ত অনুসন্ধিৎসু প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। তিনি বাড়িতে বর্ণনাকারী এবং তার পিতামাতার কাছে এমন প্রশ্ন করতেন, যার কোন উত্তর তাঁদের কাছে ছিল না। একবার তিনি হঠাৎ মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথকে প্রশ্ন করে বসেন , ‘আপনি কি সত্যি ঈশ্বরকে দেখেছেন?’ তাঁর প্রশ্ন শুনে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ বিস্মিত হয়ে পড়েন এবং তাঁর এই কৌতূহল শান্ত করার জন্য তিনি স্বামী বিবেকানন্দকে রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব এর কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন। এরপর স্বামীজী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব এর প্রতি এতটাই মুগ্ধ হয়ে পড়েন যে তিনি তাঁকে তাঁর গুরু বানান । শ্রী রামকৃষ্ণ বলা পথে স্বামী বিবেকানন্দ এগিয়ে চলতে থাকেন। এবং এইভাবে তাঁর মনে তাঁর গুরুর প্রতি ভক্তিও বাড়তে থাকে। গুরু ও শিষ্যের বন্ধন দৃঢ় হতে থাকে। এবং এর পরে স্বামীজি তাঁর গুরুর বাণীগুলি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে কৰ্মযোগে মনোযোগ দেন।

স্বামী বিবেকানন্দের আমেরিকার শিকাগো বক্ততা

স্বামী বিবেকানন্দ এক বন্ধুর সহায়তায় জাহাজে করে আমেরিকার শিকাগো শহরে পৌঁছেন। এবং তিনি সেখানের একটি বিশ্ব ধর্ম সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। তখন ইউরোপ-আমেরিকার লোকেরা ভারতীয়দেরকে খুবই হীন চোখে দেখত এবং ঘৃণা করত। সেখানে লোকেরা অনেক চেষ্টা করেছিল যে স্বামী বিবেকানন্দ সর্বধর্ম পরিষদে কথা বলার সময় যেনো না পান। কিন্তু একজন আমেরিকান অধ্যাপকের প্রচেষ্টায় স্বামী বিবেকানন্দকে মাত্র দুই মিনিট সময় দেওয়া হয়। এই সময়ে ইউরোপ ও আমেরিকার ধর্মীয় নেতারা তাদের বইগুলি এক জায়গা রাখেন এবং অন্যদিকে ভারতের ধর্মীয় গ্রন্থ শ্রীমদ ভাগবতগীতা অন্য আরেক জায়গা রাখা হয়েছিল, যা নিয়ে সেখানে মজা ও ঠাট্টা করা হচ্ছিলো । কিন্তু স্বামী বিবেকানন্দ মঞ্চে ওঠার পর যখন আধ্যাত্মিক জ্ঞানে পূর্ণ বক্তৃতা দেওয়া শুরু করেন, তাঁর কিছু সময়ের মধ্যে পুরো অডিটোরিয়ামে থাকা দর্শকরা তাঁর বক্তেতা শুনে উপস্থিত সবাই মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে যায়। 

রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা

স্বামী বিবেকানন্দ একটি নতুন ভারত নির্মাণের জন্য ১৮৯৭ সালের ১লা মে রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর সাহিত্য, দর্শন ও ইতিহাসের পণ্ডিতের দ্বারা ভারতসহ গোটা বিশ্বকে মুগ্ধ করে দিয়েছিলেন। যার ফলস্বরূপ ভারতের তরুণদের জন্য স্বামীজি একজন আদর্শ হয়ে উঠেছেন। এর ঠিক একবছর পরে স্বামীজি ১৮৯৮ সালে বেলুড় মঠ প্রতিষ্ঠা করেন, যা ভারতীয় জীবন দর্শনকে একটি নতুন মাত্রা প্রদান করে।

স্বামী বিবেকানন্দের বাণী

স্বামীজি বিদেশের মাটিতে সর্বপ্রথম ভারতের সংস্কৃতিগুলি সবার তুলে ধরেছেন। কিন্তু এছাড়াও তিনি সারা জীবন জুড়ে যুব সম্প্রদায়কে তাঁর বাণীর মাধ্যমে অনুপ্রাণিত করে চলেছেন। সেই সব বাণীগুলির মধ্যে কয়েকটি বাণী নীচে আলোচনা করেছি। যথা –

  • ওঠো জাগো এবং লক্ষ্যে না পৌঁছানো পৰ্যন্ত থেমো না।
  • এমন কাজ করে চলো যে তুমি হাসতে হাসতে মরবে আর জগৎ তোমার জন্য কাঁদবে।
  • ঘৃণার শক্তি অপেক্ষা প্রেমের শক্তি অনেক শক্তিমান।
  • শুধু বড় লোক হয়ো না। ….. বড় মানুষ হও।
  • সত্যের জন্য সব কিছু ত্যাগ করা চলে, কিন্তু কোনো কিছুর জন্য সত্যকে ত্যাগ করা চলে না।
  • একটি সময়ে একটিই কাজ করো এবং সেটা করার সময় নিজের সবকিছু তার মধ্যে ব্যয় করে দাও।
  • জগতে মায়ের স্থান সকলের উপরে,কারণ মাতৃভাবেই সব চেয়ে বেশি নিঃস্বার্থপরতা শিক্ষা ও প্রয়োগ করা হয়।
  • “আমাদের দেশের মেয়েরা শিক্ষতা নয় বটে, কিন্তু তাঁরা অনেক বেশি প্রবিত্র। ”
  • কাজ করো নির্ভিকভাবে। এগিয়ে চলো সত্য আর ভালোবাসা নিয়ে।

স্বামী বিবেকানন্দের মৃত্যু

স্বামী বিবেকানন্দ আমেরিকার শিকাগো ধর্ম সম্মেলনের বক্ততা থেকে আসার পথে অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্বামীজী বিভিন্ন রোগে প্রায় ৩ বছর ধরে তাঁর অসুস্থতা ছিলেন। কিন্তু এ সত্ত্বেও স্বামীজি জীবনের শেষ দিনে, বিবেকানন্দ শুক্ল যজুর্বেদের ব্যাখ্যা করেছিলেন। স্বামী বিবেকানন্দ ১৯০২ সালের ৪ঠা জুলাই মাত্র ৩৯ বছর বয়সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। কিন্তু স্বামীজী মৃত্যুর আগেই তাঁর গুরু রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের বার্তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার সাথে সাথে রামকৃষ্ণ প্রতিষ্ঠা এবং তাঁর বিভিন্ন গ্রন্থ পরিব্রাজক, বর্তমান ভারত ,ভাববার কথা, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য প্রভৃতির দ্বারা দেশবাসীকে উজ্জীবিত করেছিলেন।

Share the article

Leave a comment