বিল গেটস এর জীবনী – Bill Gates Biography in Bengali

বর্তমানে বিল গেটস হলেন বিশ্বের অন্যতম সেরা ধনী ব্যক্তিদের মধ্যে একজন। তিনি একজন আমেরিকান সফটওয়্যার ব্যবসায়ী এবং তিনি হলেন কম্পিউটার প্রোগ্রামার মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। আমরা সবাই জানি মাইক্রোসফট বিশ্বের সবচেয়ে বড় সফটওয়্যার কোম্পানিগুলির মধ্যে সবচেয়ে সেরা কোম্পানি। এই কোম্পানিটি প্রথম 1975 সালে শুরু করা হয়েছিল। তারপর থেকে বিল গেটস কোম্পানিতে বিভিন্ন পদে কাজ করেছেন। এবং তিনি এই কোম্পানির চেয়ারম্যান, সিইও এবং চিফ সফটওয়্যার আর্কিটেক্ট ছিলেন। কম্পিউটারের জগতে বিপ্লব আনার জন্য বিল গেটসের নাম ইতিহাসের পাতায় স্বরণীয় হয়ে আছে। তিনি সেই বড় শিল্পপতিদের মধ্যে একজন, যারা তাদের কঠোর পরিশ্রম, নিষ্ঠার মধ্য দিয়ে সারা বিশ্বে তাদের নাম সবচেয়ে উঁচুতে তুলেছেন।

বিল গেটস এর জীবন পরিচয়

পুরো নামউইলিয়াম হেনরি গেটস
বাবার নাম বিল গেটস সিনিয়র
মার নাম মেরি ম্যাক্সওয়েল গেটস
জন্ম28 অক্টোবর, 1955 সাল
জন্মস্থানসিয়াটেল, ওয়াশিংটন স্টেট, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
বাসস্থানমার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
শিক্ষা হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় (স্নাতক Drop out)
পেশা ব্যবসায়ী (মাইক্রোসফটের সহ প্রতিষ্ঠাতা ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের কো-চেয়ারম্যান
আয়US$114 বিলিয়ন (এপ্রিল 2022)
স্ত্রীমেলিন্ডা গেটস (1994)
সন্তান তিন
সন্তানদের নামজেনিফার ক্যাথরিন গেটস, ফোয়ে অ্যাডেল গেটস, ররি জন গেটস
বইয়ের নাম The Road Ahead

বিল গেটস এর জন্ম ও পরিবার 

বিল গেট 1955 সালের 28 অক্টোবর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন শহরের সিয়াটল অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন। তার পুরো নাম হলো উইলিয়াম হেনরি গেটস। এবং তার পিতার নাম উইলিয়াম হেনরি গেটস সিনিয়র ও মায়ের নাম হলো মেরি ম্যাক্সওয়েল গেটস। তার বাবা পেশায় ছিলেন একজন সুপরিচিত আইনজীবী। এবং তাঁর তার মা সেই সময়ে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের Principal রয়েছিলেন।বর্তমানে বিল গেটসের দুই বোন রয়েছে, তাদের মধ্যে তাঁর বড় বোনের নাম ক্রিশ্চিয়ান গেটস এবং ছোট বোনের নাম লিবিয়া গেটস।

বিল গেটস ছোট বেলার থেকেই তার মায়ের কাছ থেকে অনেক সাহায্য ও অনুপ্রেরণা পেয়েছেন। তাঁর বাবা-মা তার প্রতিটি পদক্ষেপে সমর্থন দিয়েছেন। তিনি বাবা মার কাছ থেকে তার ছোট-বড় সব সমস্যা ও প্রয়োজনের সমাধান পেতেন। বিল গেটস এখনও বিশ্বাস করেন যে তার মায়ের সমর্থনের কারণেই তিনি আজ এই পর্যায়ে বা সাফল্যে পৌঁছাতে পেরেছেন। বিল গেটস ছোটবেলা থেকেই খুব বেশি দুষ্টু ছিলেন।তিনি কারোর সাথেই খুব একটা বেশি কথা বলতেন না। তিনি সব সময় শুধু বই নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন। তাঁর আগের থেকেই প্রায় সব বিষয়েই আগ্রহ ছিল।

আরও পড়ুন

বিল গেটস এর শিক্ষাজীবন

বিল গেটসের বয়স যখন 13 বছর হয়, তখন তাকে লেকসাইড স্কুলে ভর্তি করানো হয়েছিল। যেটি তখন সিয়াটল শহরের সেরা স্কুলগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল।তখন সেই স্কুলে শুধুমাত্র মেধাবী ছাত্রদের ভর্তি নেওয়া হতো। তার মা তাকে এখানে ভর্তি করান। তিনি প্রথম থেকেই তার স্কুলের টেক্সট ও রেফারেন্স বইয়ের পাশাপাশি এনসাইক্লোপিডিয়ার মতো বই পড়তে পছন্দ করতেন। যখন তার বয়স 15 বছর,তারপর তার মা কিছু বিশেষ ব্যবস্থা করে লেকসাইড স্কুলের জন্য একটি কম্পিউটারের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করেছিলেন।

বিল গেটস এর কম্পিউটার শিক্ষা

বিল গেটসের ছোট থেকেই কম্পিউটারের প্রতি অনেক বেশি আগ্রহ ছিল। এর পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয় যেমন তিনি গণিতেও খুব আগ্রহী ছিলেন। 1969 সাল থেকে বিল তার উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা আরম্ভ করেন।সেই সময় শাটল নামে একটি কোম্পানি লেকসাইড স্কুলে তাদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ শুরু করেন। এবং বিল আগের থেকেই কম্পিউটার শেখার কারণে সহজেই তিনি কম্পিউটার ক্লাসে ভর্তি হন এবং প্রশিক্ষকদের প্রশ্নোর উত্তর দিতে থাকেন।

কম্পিউটারের প্রতি বিলের আগ্রহ এখন থেকে আরও বেশি করে বাড়তে থাকে। তাঁর মধ্যে কম্পিউটার কীভাবে কাজ সম্পর্কে জানার কৌতূহল আরও বেশি করে বাড়তে থাকে। সেজন্য তিনি স্কুলে কম্পিউটার ক্লাসেই বেশি সময় কাটাতে শুরু করেন। বিল গেটস কম্পিউটার ক্লাসে থাকাকালীন তাঁর বন্ধু ও bussiness পার্টনার পল অ্যালেনের সাথে দেখা হয়েছিল। যিনি তাঁর থেকে 2 বছরের বড় ছিলেন। যাইহোক, প্রথম দিকে তাদের দুজনের চিন্তাভাবনা একে অপরের সাথে কোনো ভাবেই মেলেনি।

কারণ অ্যালেন যেখানে খুব লাজুক এবং শান্ত স্বভাবের ছিলেন।এবং ঠিক অন্য দিকে বিলের সম্পূর্ণ প্রকৃতি ছিল তার বিপরীত স্বভাবের। কিন্তু কম্পিউটার সম্পর্কে তাদের অনুরূপ ধারণার কারণে বিল এবং অ্যালেন কয়েক দিনের মধ্যে একে অপরের খুব ভাল বন্ধু হয়ে ওঠেন। সে সময় এমনটা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। ভবিষ্যতে, এরা দুই জন সফটওয়ারের সাহায্যে পৃথিবীকে বদলে দিতে পারে।

1970 সালে, বিল গেটস তার বন্ধু পল অ্যালেনের সাথে Traf-O-Data নামে একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম তৈরি করেছিলেন। যা আমেরিকার সিয়াটল শহরের ট্রাফিক প্রবাহ পরিমাপ করতে ব্যবহৃত হয়। এর জন্য তারা দুজনই সেই সময় $20000 ডলার পেয়েছিলেন। যা ছিল তাঁদের প্রথম আয়। এর মাধ্যমে প্রযুক্তি জগতে প্রবেশ করতে শুরু করেছিলেন বিল গেটস ও পল অ্যালেন।

বিল গেটস এর Microsoft Company প্রতিষ্ঠা

1975 সালে, বিল গেটস তাঁর বন্ধু পল অ্যালেনের সাথে সহযোগিতায় মাত্র 19 বছর বয়সে মাইক্রোসফ্ট কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। তারপর তাঁরা Ad Rovers কোম্পানির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে শুরু করে। এরপর থেকে কম্পিউটারের ব্যবহার অনেক বাড়তে থাকে। এবং বিল গেটস তাঁর ফাইনাল ইয়ারের আগেই পড়াশোনা ছেড়ে দেন।সেই সময়ে প্রাথমিক পর্যায়ে তাকে অনেক প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়েছে।

যারা কম্পিউটার ব্যবহার করে তাঁরা মাইক্রোসফ্ট বেসিককে খুব দ্রুত পছন্দ করতে শুরু করে এবং সময়ের সাথে সাথে মাইক্রোসফট খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তারপর 1976 সালে, মাইক্রোসফ্ট Mits থেকে স্বাধীন হয়। বিল গেটস এবং তার সঙ্গী কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ সফটওয়্যার নিয়ে কাজ করতে থাকেন।

বিল গেটসের দক্ষতা শুধু সফটওয়্যার তৈরিতেই ছিল না। সেই সঙ্গে ব্যবসাকে এগিয়ে নিয়ে কোম্পানিকে শীর্ষে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। বিলের কঠোর পরিশ্রম এবং নিষ্ঠার কারণে ইন্টেল এবং আইবিএমের মতো হার্ডওয়্যার নির্মাতা কোম্পানির মতো কোম্পানির প্রবৃদ্ধি দিন দিন বেড়েই চলে ছিল। এরপর মাইক্রোসফট তার নতুন সফটওয়্যারকে বিভিন্ন ভাষায় সম্প্রসারিত করতে শুরু করে । তারা অন্যান্য কম্পিউটার কোম্পানির কাছে তাদের পণ্য বিক্রি করতে শুরু করে।

1978 সালের শেষ নাগাদ, এই সফ্টওয়্যারগুলির বিক্রি 1 মিলিয়ন অর্থাৎ 10 লাখেরও বেশি হয়ে যায়। এবং 1978 এবং 1981 সালের মধ্যে, মাইক্রোসফ্ট কোম্পানিতে একটি বিস্ময়কর বিকাশ ঘটেছিল। খুব অল্প সময়ের মধ্যে, মাইক্রোসফটের কর্মী সংখ্যা 13 থেকে বেড়ে 128-এ উন্নীত হয়ে গিয়েছিল।

বিল গেটস এর বিবাহজীবন

বিল গেটস 1994 সালে ফ্রান্সে বসবাসকারী মেলিন্ডার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। 1996 সালে মেলিন্ডা বিল গেটসের কন্যা জেনিফার ক্যাথরিন গেটসের জন্ম দেন।

বিল গেটস এবং মেলিন্ডার আরও দুটি সন্তান রয়েছে, যার নাম ররি জন গেটস এবং ফোবি অ্যাডেল গেটস। বর্তমানে, বিল গেটস তার পরিবারের সাথে ওয়াশিংটনের মদিনায় তার একটি বিলাসবহুল বাড়িতে থাকেন, যার মূল্য $12.50 মিলিয়ন ডলার।

বিল গেটস এর জনপ্রিয় ১০ টি উক্তি

  1. আপনার তুলনা কখনও কারোর সাথে করবেন না।যদি আপনি তা করেন তাহলে আপনি নিজেই নিজেকে অপমান করছেন।
  2. যদি আপনি গরিব হয়ে জন্মগ্ৰহণ করেন তাহলে সেটা আপনার দোষ না কিন্তু আপনি যদি গরিব হয়ে মারা যান তবে এটি আপনার দোষ।
  3. বিশ্ব আপনার আত্মসম্মান সম্পর্কে চিন্তা করবে না। আপনি নিজের সম্পর্কে ভাল বোধ করার আগে বিশ্ব আপনার কাছে কিছু অর্জনের প্রত্যাশা করবে।
  4. সাফল্য একটি পরিপূর্ণ শিক্ষক. এটি মানুষের মধ্যে চিন্তাভাবনা বিকাশ করে যে তারা ব্যর্থ হতে পারে না।
  5. প্রত্যেকেরই একজন প্রশিক্ষক প্রয়োজন। আপনি একজন বাস্কেটবল খেলোয়াড়, একজন টেনিস খেলোয়াড়, একজন জিমন্যাস্ট বা ব্রিজ খেলোয়াড় কিনা তা কোন ব্যাপার না।
  6. জীবন সেমিস্টারে বিভক্ত নয়। আপনি গ্রীষ্মকালীন ছুটি পান না এবং খুব কম নিয়োগকর্তা আপনাকে সাহায্য করতে ইচ্ছুক। নিজেকে খুঁজে পেতে।
  7. আমি ভাগ্যবান ছিলাম যে গুরুত্বপূর্ণ কিছুতে জড়িত থাকতে এবং অবদান রাখতে পেরেছিলাম। এটি সফ্টওয়্যারের মাধ্যমে মানুষকে ক্ষমতায়ন করছে।
  8.  আমি বিশ্বাস করি যে আপনি যদি লোকেদের সমস্যা দেখান এবং আপনি তাদের সমাধান দেখান তবে তারা ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে।
  9. ধৈর্য সাফল্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
  10. সাফল্যের আনন্দ অনুভব করা ভাল। তবে আপনার ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নেওয়া অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

বিল গেটস এর জীবনী FAQs

বিল গেটস কে?

বিল গেটস হলেন বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তিদের মধ্যে একজন। তিনি একজন বড় মাপের আমেরিকান সফটওয়্যার ব্যবসায়ী, যিনি কম্পিউটার প্রোগ্রামার মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা।আরও পড়ুন

বিল গেটস কবে জন্মগ্রহণ করেন?

বিল গেট 28 অক্টোবর 1955 সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন শহরের সিয়াটল এ জন্মগ্রহণ করেন। তার পুরো নাম উইলিয়াম হেনরি গেটস।আরও পড়ুন

Share the article

Leave a comment