আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ নিবন্ধে আমরা ভারতীয় জনতা পার্টির প্রতিষ্ঠাতা শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর জীবনী (Shyama Prasad Mukherjee Biography in Bengali ) সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানব। শ্যামা প্রসাদ মুখোপাধ্যায় ভারতীয় রাজনীতির সাথে তাঁর নাম গভীরভাবে জড়িত এবং তার ভিন্ন মতাদর্শের জন্য সুপরিচিত ছিলেন। তিনি সর্বদা হিন্দুত্ব রক্ষার জন্য তার আওয়াজ তুলেছিলেন এবং তিনি Article 370 ধারার তীব্র বিরোধিতাও করেছিলেন।তাহলে জেনে নেওয়া যাক শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর জীবন পরিচয় সম্পর্কে।
শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর জীবন পরিচয়
পুরো নাম | শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় |
বাবার নাম | আশুতোষ মুখোপাধ্যায় |
মায়ের নাম | যোগমায়া দেবী মুখোপাধ্যায় |
জন্ম তারিখ | ১৯০১ সালের ৬ জুলাই |
জন্মস্থান | মধ্যপ্রদেশের মহউ ক্যান্টনমেন্টে |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
ধর্ম | হিন্দু |
কলেজ | প্রেসিডেন্সি কলেজ,কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় |
শিক্ষা | ব্যারিস্টার |
স্ত্রীর নাম | সুধা দেবী মুখোপাধ্যায় |
সন্তান | ৫টি সন্তান |
মৃত্যু | ১৯৫৩ সালের ২৩শে জুন |
শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর জন্ম ও পরিবার
শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ১৯০১ সালের ৬ জুলাই মধ্যপ্রদেশের মহউ ক্যান্টনমেন্টে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ছিল আশুতোষ মুখোপাধ্যায়।এবং তাঁর মায়ের নাম হলো যোগমায়া দেবী মুখার্জি। তাঁর বাবা আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।
শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর শিক্ষা
শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী ছোট বেলার থেকেই পড়াশোনায় যথেষ্ট ভালো ছিলেন। তিনি তাঁর স্কুলের প্রতিটি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে আসতেন । তিনি ১৯২১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে ফার্স্ট ক্লাস নিয়ে স্নাতক পাশ করেন।
কিছুকাল পরে তিনি ১৯২৩ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটের সদস্য নির্বাচিত হন।এরপর তিনি বিদেশে ব্যারিস্টারি হওয়ার জন্য যান। এবং ১৯২৭ সালে বিদেশ থেকে পড়াশোনা করে ব্যারিস্টারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভারতে ফিরে আসেন।
শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর বিবাহ
1922 সালে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী ডা. বেণীমাধব চক্রবর্তীর কন্যা সুধা দেবীকে বিয়ে করেন। তাঁদের দুই জনের পাঁচটি সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের কনিষ্ঠ সন্তান অসুস্থ হয়ে মারা যান এবং শীঘ্রই তার স্ত্রীও মারা যায়। শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি তার জীবনসঙ্গীর অকাল মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছিলেন এবং আর কখনও বিয়ে করেননি। তার ভগ্নিপতি তার সন্তানদের মানুষ করতে সাহায্য করেছিল।
আরও পড়ুন – নরেন্দ্র মোদীর জীবনী
শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর রাজনৈতিক জীবন
ভারতে ফিরে আসার পর, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব করে, তিনি কংগ্রেস প্রার্থী হিসাবে 1929 সালে বেঙ্গল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হন, কিন্তু 1930 সালে কংগ্রেস আইনসভা বয়কটের ডাক দিলে শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি আইন পরিষদের সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করেন। পরে তিনি একজন নির্দল প্রার্থী হিসেবে পুনরায় নির্বাচিত হয়ে আসেন।
1934 সালে মাত্র 33 বছর বয়সে, তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর নিযুক্ত হন এবং বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ উপাচার্য হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। 1938 সাল পর্যন্ত পদটি সামলে ছিলেন। তাঁর এই কার্যকালের সময়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক গঠনমূলক সংস্কার করে ছিলেন।
1937 সালে কৃষক প্রজা পার্টি এবং মুসলিম লীগ জোট পুনরায় ক্ষমতায় এলে শ্যামা প্রসাদ মুখোপাধ্যায় বিরোধী দলের নেতা হন। এবং ফজলুল হকের অধীনে প্রগতিশীল জোট মন্ত্রনালয়ে অর্থমন্ত্রী হয়ে ছিলেন।কিন্তু 1942 সালের 20 নভেম্বর তিনি ভারত ছাড়ো আন্দোলনের বিরুদ্ধে ব্রিটিশদের দমনমূলক নীতি গ্রহণের অভিযোগ এনে তার পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
কিছুদিন পর শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী অল ইন্ডিয়া হিন্দু মহাসভায় যোগ দেন। 1940 সালে মুখার্জী সর্বভারতীয় হিন্দু মহাসভার কার্যকরী সভাপতি নিযুক্ত হন এবং 1944 সালে তিনি হিন্দু মহাসভার পূর্ণাঙ্গ সভাপতি পদে আসীন হন।এরপরে ১৯৫১ সালের ২১ অক্টোবর তিনি RSS এর সহযোগী শ্রী গোলওয়ালকর গুরুজির সাথে দেখা করে এবং পরামর্শ নিয়ে ভারতীয় জনসংঘ (BJS) দল গঠন করেন। বর্তমানে এই দলটি ভারতীয় জনতা পার্টি (BJP) নামে পরিচিত।
বিশেষ তথ্য: ভারতের স্বাধীনতা লাভ করার পর তাকে জহরলাল নেহরুর নেতৃত্বধীন কংগ্রেসের অন্তর্বর্তীকালীন কেন্দ্রীয় সরকারের শিল্প ও সরবরাহ মন্ত্রী করা হয়। কিন্তু তিনি সরকারের কিছু সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন।
শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর মৃত্যু
শ্যামা প্রসাদ মুখোপাধ্যায় ১৯৫৩ সালের ২৩ শে জুন জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যে তাঁর জীবনের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এবং যখন তিনি মারা যান, সেই সময় তিনি এই রাজ্যে Article 370 ধারার বিরোধিতা করছিলেন এবং একই সময়ে তাকে গ্রেফতার করে জেলে নেওয়া হয়েছিল।