আমরা আজকের এই নিবন্ধে ভারতের স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরু জীবনী সম্পর্কে জানতে যাচ্ছি। পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু ছিলেন ভারতের রাজনীতির এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। তিনি আদর্শবাদী সমাজতান্ত্রিক ধরনের আর্থ-সামাজিক নীতি প্রবর্তন করেন। এছাড়াও তিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট লেখক এবং ‘দ্য ডিসকভারি অফ ইন্ডিয়া’ এবং ‘গ্লিম্পসেস অফ দ্য ওয়ার্ল্ড হিস্ট্রি’-এর মতো বিখ্যাত বইগুলি তিনি লিখেছেন।
জহরলাল নেহেরু এর জীবন পরিচয়
পুরো নাম | পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু |
বাবার নাম | মতিলাল নেহেরু |
মায়ের নাম | স্বরূপরাণী নেহেরু |
জন্ম তারিখ | ১৪ নভেম্বর, ১৮৮৯ সাল |
জন্মস্থান | উত্তরপ্রদেশ,এলাহাবাদ,ব্রিটিশ ইন্ডিয়া |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
ধর্ম | হিন্দু |
কলেজ | হ্যারো কলেজ এবং কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় |
শিক্ষা | ব্যারিস্টার |
স্ত্রীর নাম | কমলা নেহেরু |
সন্তান | ১ মেয়ে |
মৃত্যু | ১৯৬৪ সালের ২৭শে মে |
জহরলাল নেহেরু এর জন্ম ও পরিবার
জওহরলাল নেহরু 1889 সালের 14 নভেম্বর ব্রিটিশ ভারতের উত্তর প্রদেশের এলাহাবাদ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পুরো নাম ছিল পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু।তাঁর পিতার নাম ছিল মতিলাল নেহেরু এবং তাঁর মায়ের নাম ছিল স্বরূপরাণী। জওহরলাল নেহেরু ছিলেন তার পিতার একমাত্র পুত্র এবং তিন কন্যা ছিল। জওহরলাল নেহরু ছোট বেলার থেকেই শিশুদের প্রতি অগাধ ভালোবাসা ছিল এবং তিনি শিশুদেরকে দেশের ভবিষ্যৎ নির্মাতা হিসেবে বিবেচনা করতেন।
জহরলাল নেহেরু এর শিক্ষাজীবন
জহরলাল নেহরুর পারিবারিক অবস্থায় ভালো থাকার কারণে তিনি বিশ্বের অন্যতম সেরা স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা লাভের সুযোগ পেয়েছিলেন। তিনি ট্রিনিটি লন্ডন থেকে হ্যারো কলেজে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন।এরপরে তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। তিনি ইংল্যান্ডে 7 বছর পড়াশোনা করার ব্রিটিশদের ফ্যাবিয়ান সমাজতন্ত্র এবং আইরিশ জাতীয়তাবাদ সম্পর্কেও জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। এরপর 1912 সালে, তিনি ভারতে ফিরে আসেন এবং এখানেই তিনি ওকালতি শুরু করেন।পরে তাঁর সাথে মহাত্মা গান্ধীর সাক্ষাৎ হয় এবং তারা ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে ছাপিয়ে পড়েন।
জহরলাল নেহেরু এর বিবাহজীবন
বিদেশ থেকে পড়াশোনা শেষ করার পরে 1916 সালে ২৬ বছর বয়সে জহরলাল নেহেরু কমলা নামে একটি ১৬ বছরের কাশ্মীরি ব্রাহ্মণ মেয়ের সাথে বিয়ে করেছিলেন। এবং 1917 সালে তাদের দুজনের একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়, যার নাম ছিল প্রিয়দর্শিনী। যিনি পরবর্তীতে ভারতের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হন।যাকে আমরা সবাই ইন্দিরা গান্ধী নামে জানি।
আরও পড়ুন – মহাত্মা গান্ধীর জীবনী
জহরলাল নেহেরু এর রাজনৈতিক জীবন
1919 সালের পরে জওহরলাল নেহেরু মহাত্মা গান্ধীর সংস্পর্শে আসার পর গান্ধীজির আদর্শে উদবুদ্ধ হয়ে পরাধীন ভারতবর্ষের রাজনীতিতে পা রাখেন। সেই সময় মহাত্মা গান্ধী রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছিলেন। জওহরলাল নেহেরু মহাত্মা গান্ধীর সক্রিয় কিন্তু শান্তিপূর্ণ আইন অমান্য আন্দোলন দ্বারা দৃঢ়ভাবে প্রভাবিত হয়ে ছিলেন। জওহরলাল নেহরুর পাশাপাশি তাঁর পরিবারও মহাত্মা গান্ধীর সংস্পর্শে আসেন, যার পরে তাঁর বাবা মতিলাল নেহেরু খাদি পোশাক গ্রহণ করেন।
জওহরলাল নেহেরু 1920-1922 সালে গান্ধীজি দ্বারা সংগঠিত ‘অসহযোগ-আন্দোলনে’ সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন, সেই সময় তিনি প্রথমবারের মতো জেল খেটেছিলেন। তারপরে, তিনি 1924 সালে এলাহাবাদ মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান হিসাবে দুই বছর শহরের দায়িত্ব পালন করেন এবং 1926 সালে তিনি ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের সহযোগিতার অভাবের কারণে সেই পদ থেকে পদত্যাগ করেন। মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করার পর, তিনি 1926 থেকে 1928 সাল পর্যন্ত ‘অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস’-এর সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রীরূপে জহরলাল নেহেরু
1947 সালে ভারত স্বাধীনতা লাভ করার পরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য জাতীয় কংগ্রেসে একটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যাতে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল সর্বাধিক ভোট পান। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছেন আচার্য কৃপালানি। কিন্তু মহাত্মা গান্ধীর নির্দেশে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল এবং আচার্য কৃপলানি দুজনেই প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে তাদের নাম প্রত্যাহার করে নেন। এরপর গান্ধীজির নির্দেশে জওহরলাল নেহেরুকে স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী করা হয়। তিনি ১৯৫১, ১৯৫৭ এবং ১৯৬২ সালে পরপর তিন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে জয়লাভ করেছিলেন।
1955 সালে তাকে ভারতের সর্বোচ্চ সম্মান ‘ভারত রত্ন’ উপাধি দেওয়া হয়েছিল। নেহেরু অনেক আন্তর্জাতিক বিষয়ে মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তিনি পাকিস্তান ও চীনের সাথে ভারতের সম্পর্কের উন্নতি করতে পারেননি। চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য তিনি চীনের কাছেও বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়েছিলেন, কিন্তু ১৯৬২ সালে চীনের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে ভারতের অনেকটা সমস্যায় পড়তে হয়েছিল।
জহরলাল নেহেরু এর মৃত্যু
১৯৬২ সালের ভারত-চিন যুদ্ধের পর থেকে জহরলাল নেহরুর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। তিনি 1964 সালের 27 মে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। দিল্লির যমুনা নদীর তীরে শান্তিবনে তাঁর শেষ কাজ করা হয়।
Jawaharlal Nehru Biography in Bengali FAQ
জহরলাল নেহেরু কবে ও কোথায় জন্ম গ্রহণ করেন?
জওহরলাল নেহরু 1889 সালের 14 নভেম্বর ব্রিটিশ ভারতের উত্তর প্রদেশের এলাহাবাদ শহরে জন্মগ্রহণ করেন।
জহরলাল নেহেরুর বাবার নাম কী?
মতিলাল নেহেরু।
জহরলাল নেহেরুর মায়ের নাম কী?
স্বরূপরাণী নেহেরু।