ইউটিউব কি এবং ইউটিউব চ্যানেল খোলার নিয়ম কি কি?

আজকের এই মূল্যবান নিবন্ধে জানব আপনি ইউটিউব চ্যানেল খোলার নিয়ম এবং কীভাবে ইউটিউব থেকে আয় করবেন। এই ইন্টারনেটের যুগে লোকেরা বেশি টেক্সট পড়ার চেয়ে ভিডিও দেখতে পছন্দ করে থাকেন। এর জন্য বিভিন্ন অনলাইন ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। কিন্তু তাঁদের মধ্যে অন্যতম সেরা জনপ্রিয় ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম হলো ইউটিউব।এখানে লোকেরা বিনামূল্যে যেকোনো ধরণের দেখতে এবং নিজের জ্ঞান শেয়ার করে ভিডিও আপলোড করতে পারবেন।এবং এটি করে বিশ্বের সামনে নিজের নাম বানাতে এবং অর্থ উপার্জন করতে পারেন।

ইউটিউব কি?

ইউটিউব হলো বিশ্বের বৃহত্তম অনলাইন ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম। যেখানে যেকোনো ধরনের ব্যক্তি নিজের পছন্দ মতো বিভিন্ন শিক্ষামূলক ভিডিও, গানের ভিডিও, কমেডি ভিডিও, ইনফরম্যাশনাল ভিডিও এবং বিভিন্ন ব্লগের ভিডিও ইত্যাদির মতো অনেক ধরনের ভিডিও দেখতে পাওয়া পাবেন।

আপনি যদি ইউটিউবে কোনো ভিডিও আপলোড করতে চান,তবে এর জন্য আপনাকে একটি টাকাও ইউটিউব প্ল্যাটফর্মটিকে দিতে হবে না। আপনি এই ইউটিউব একটি একেবারে বিনামূল্যের ব্যবহার করার প্ল্যাটফর্ম।বিশ্বের যে কোনও ব্যক্তি জায়গায় থেকে ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করে বিভিন্ন উপায়ে ঘরে অনলাইনে অর্থ উপার্জন করতে পারেন।

ইউটিউব এর ইতিহাস

2005 সাল থেকে শুরু হওয়া YouTube ইদানীংকালে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে। প্রথম দিকে Youtube শুধু ইংরেজি ভাষায় মনেটিজটিশন চালু করা হলেও পরে এটিতে 50 টিরও বেশি ভাষায় YouTube এর ভিডিও আপলোড করে মনেটিজটিশন চালু করতে পারবেন।বর্তমান সময়ে প্রতিদিন ইউটিউবে লক্ষ লক্ষ ইউটিউব ভিডিও আপলোড করা হয়।

কিছু কাল আগে মানুষ ডাটার দাম বেশি থাকার কারণে ব্লগ পড়তে বেশি স্বচ্ছন্দবোধ করতেন।কিন্তু এখন লোকেরা ভিডিও দেখতে বেশি পছন্দ করে থাকে। যার থেকে অনুমান করা যেতে পারে যে সাম্প্রতিককালে ইউটিউবের জনপ্রিয়তা কতখানি বেড়ে গিয়েছে।

ইউটিউব চ্যানেল খোলার নিয়ম কি কি?

Youtube থেকে অর্থ উপার্জন করার আগে আপনাকে একটি YouTube চ্যানেল তৈরি করতে হবে। যার জন্য একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইসের প্রয়োজন হবে। এবং আপনার যদি ল্যাপটপ বা কম্পিউটারের না থাকে। তাহলেও আপনি একটি স্মার্টফোন থেকে ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করতে পারেন। একটি Professional Youtube Channel Create করার জন্য নীচে দেওয়া কিছু জিনিসের প্রয়োজন হবে। এগুলি হলো –

  • একটি Youtube Channel তৈরী করার জন্য Gmail Account এর দরকার হবে। যার সাহায্যে আপনি সহজেই youtube channel create করতে পারবেন।
  • আপনার ইউটিউব চ্যানেলের একটি নাম নিৰ্বাচন করুন। যা সবার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা রকমের জানি হয়।
  • এরপরে আপনার চ্যানেলকে একটি professional Channel বানানোর জন্য professional Logo design করুন। যাতে আপনার চ্যানেলটি দেখতে খুব ভালো লাগবে।
  • এরপর ইউটিউব ভিডিও বানানোর জন্য একটি Niche(বিষয়) নির্বাচন করুন। যাতে আপনার ইন্টারেস্ট এবং জ্ঞান দুইটাই রয়েছে।
  • এর পরে আপনারাদের ফোনের ইউটিউব এর অ্যাপটির খোলার পর তাঁর উপরের Profie Icon বিকল্পটিতে ক্লিক করুন।
  • এখন আপনার সামনে অনেকগুলি বিকল্প অপশন আসবে,তাঁর মধ্যে Your Channel অপশনটিও থাকবে।
  • এই অপশনটিতে ক্লিক করে আপনার চ্যানেল এর নাম লিখে Create Channel এ ক্লিক করার পরে চ্যানেলটি তৈরী হয়ে যাবে।
  • এগুলি সব করার পরে ভিডিও আপলোড করুন। এবং বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিতে ভিডিওটি শেয়ার করতে থাকুন।

কীভাবে ইউটিউব থেকে আয় করবেন?

আমাদের উপরে দেওয়া কীভাবে ইউটিউব চ্যানেল বানাবেন? অনুসরণ করার পরে একটি ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করার পর আপনাকে নিয়মিতভাবে ভিডিও আপলোড করতে হবে। অন্যথায় আপনাকে অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট সময়ে আপনার ভিডিও আপলোড করতে হবে যেমন প্রতি ২ দিনে একটি ভিডিও আপলোড করতে হবে। এখানে আমরা ইউটিউব থেকে টাকা আয় করার ৬টি সহজ উপায় সম্পর্কে বলতে যাচ্ছি। সেগুলি হলো –

১.গুগল অ্যাডসেন্স থেকে আয়

ইউটিউব ভিডিও আপলোড করে অর্থ উপার্জনের সবচেয়ে সহজ উপায় হল গুগল অ্যাডসেন্স। কিন্তু Youtube আপনার YouTube Channel Monetization এর জন্য একটি Eligibility Criteria রেখেছে। আপনি চ্যানেলটি Monetization করার জন্য আপনাকে 1 বছরের মধ্যে চ্যানেলটিকে 4000 Watch time এবং 1000 জন Subscribers সম্পূর্ণ করতে পারলে এবং Youtube Privacy Policy মেনে চললে Google Adsense দ্বারা YouTube Channel Monetization হয়ে যাবে। এবং তাঁর পর থেকে নিয়মিতভাবে Youtube video ছেড়ে গুগল অ্যাডসেন্স থেকে টাকা আয় করতে পারবেন।

Google Adsense থেকে Monetization লাভ করার পরে youtube আপনার চ্যানেলের ভিডিওগুলিতে ইউজারদের পছন্দ মতো বিজ্ঞাপন দেখাতে শুরু করবে। এবং যখন কোন ইউজার আপনার চ্যানেলের ভিডিওতে আসা বিজ্ঞাপনগুলিতে ক্লিক করবে এবং বিজ্ঞাপনগুলি যত্ন সহকারে শেষপৰ্যন্ত দেখবে,তখন Youtube তাঁর বদলে আপনাকে অর্থ প্রদান করতে থাকবে। কিন্তু কখনোই আপনার নিজের ভিডিও খুলে বিজ্ঞাপনে ক্লিক করতে শুরু করবেন।এটি Youtube একেবারেই পছন্দ করে থাকে না।

আপনার ডকুমেন্টস ভেরিফাই করার পরে, যখন আপনার YouTube Channel প্রথম $১০ পৌঁছাবে,তখন google Adsense Team এড্রেস ভেরিফিকেশন করার জন্য একটি কোড আপনার দেওয়া ঠিকানাতে পাঠাবে।সেই কোডটি সাবমিট করলে এড্রেস ভেরিফিকেশন সম্পূর্ণ হয়ে যাবে। আপনার YouTube Channel প্রতি মাসে Minimum $১০০ সম্পূর্ণ করতে পারলে google Adsense Team আপনার দেওয়া ব্যাঙ্ক একাউন্ট এর মধ্যে মাসের শেষে পাঠিয়ে দেবে। আপনার ভিডিওগুলি যত বেশি লোক দেখব এবং বিজ্ঞাপনে ক্লিক করবে,তত বেশি টাকা আপনারা ইউটিউব থেকে আয় করতে পারবেন।

২. অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংথেকে আয়

ইউটিউবের সাহায্যে অর্থ উপার্জনের আরেকটি সহজ উপায় হলো অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং থেকে আয়। আপনি বিভিন্ন ই-কমার্স কোম্পানি (যেমন Amazon, Flipkart ইত্যাদি) অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামে যুক্ত হতে পারেন। অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামে যুক্ত হওয়ার পরে আপনি আপনার ভিডিওতে কোনো প্রোডাক্ট সম্পর্কে বললে,সেই পণ্য বা পরিষেবাটির একটি অ্যাফিলিয়েট লিঙ্ক ইউজারদের কিনতে বলতে পারেন।এবং যখনই কোনো একজন ভিজিটর আপনার ভিডিওর ডেস্ক্রিবশন খুলবে এবং সেই অ্যাফিলিয়েট লিঙ্কে ক্লিক করবেন, তখন সেই ব্যক্তি সরাসরি ই-কমার্স কোম্পানির ওয়েবসাইটে পৌঁছাবে।

ই-কমার্স কোম্পানির ওয়েবসাইটে পৌঁছানোর পরে আপনার দেওয়া লিঙ্ক থেকে কিছু কিনলে কোম্পানি আপনাকে কিছু শতাংশ কমিশন দিয়ে থাকে। এইভাবে ইউটিউব ভিডিওতে লিঙ্ক শেয়ার করে আপনি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং থেকে একটি মোটা অংকের অর্থ উপার্জন করতে পারেন।

বর্তমান সময়ে বাজারে বিভিন্ন ধরণের কোম্পানি আছে যারা অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামে যুক্ত হওয়ার সুযোগ দিয়ে থাকে। এবং এগুলির মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যাফিলিয়েট কোম্পানি হল অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম। এখানে 50 মিলিয়নেরও বেশি আইটেম সহ অ্যামাজন বিশ্বের বৃহত্তম ই-কমার্স ওয়েবসাইট হয়ে উঠেছে। আপনি আপনার ভিডিওর ক্যাটাগরি অনুসারে পণ্যের অ্যাফিলিয়েট লিংক শেয়ার করতে পারেন এবং এখন অর্থ উপার্জন করতে পারেন।

৩. স্পনসরশিপ থেকে আয়

এর আগের দুই Earning Source এর তুলনায় ইউটিউবরা তাঁদের বেশিরভাগ ইনকাম স্পন্সরশিপের সাহায্যে করে থাকে। আপনার যদি একটি ভালো Youtube Audience থাকে এবং ভিডিওগুলি পছন্দ করে,তবে বিভিন্ন কোম্পানি আপনার চ্যানেলের মাধ্যমে তাঁদের পণ্যগুলি স্পনসরশিপ করে থাকে।

আপনার Youtube Channel এর Category অনুসারে কোম্পানি তাঁদের পণ্য promote করার চেষ্টা করে। আপনি যদি আপনার চ্যানেলে টেকনোলজি সম্পর্কিত ভিডিও আপলোড করেন,তবে আপনি শুধুমাত্র মোবাইল এবং টেকনোলজির স্পনসরশিপ পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।এই বিষয়ের ভিডিওটিতে কোম্পানিগুলি সবথেকে বেশি স্পনসরশিপ এবং টাকা পাওয়া যায়।এছাড়াও আপনার finance বিষয়ে Youtube channel থাকলেও বেশি টাকার স্পনসরশিপ পাওয়া যায়।

আপনি যদি প্রতি মাসে একটি ভালো ধরণের স্পনসরশিপ পান,তবে আপনার স্পন্সরশিপের আয় অ্যাডসেন্সের ইনকামের চেয়ে অনেক বেশি হয়ে থাকে। এখানে আপনার চ্যানেলের ক্যাটাগরি এবং ভিডিওটির ভিউ অনুযায়ী টাকা নিতে পারেন।

এই তিনটি অর্থ উপার্জনের মাধ্যম ছাড়াও YouTube থেকে অর্থ উপার্জনের জন্য সুপারচ্যাট, মার্চেন্ডাইজ, কোর্স সেলিং এর মতো গুরুত্বপূর্ণ ইনকামের উপায় রয়েছে।যার থেকে আপনি একটি ভালো করতে পারবেন।

Share the article

Leave a comment