বাপ্পি লাহিড়ী ছিলেন ভারতীয় সিনেমা শিল্পের একজন সুপরিচিত ডিস্কো গায়ক, রেকর্ড প্রযোজক এবং অভিনেতা ইত্যাদি। ভারতীয় চলচ্চিত্রে ডিস্কো সঙ্গীতকে জনপ্রিয় করতে তিনি অনেক অবদান রেখেছেন। 1980 সাল থেকে 1990 সাল পর্যন্ত তিনি ভারতীয় চলচ্চিত্রে আরও খ্যাতি পান। ভারতীয় সিনেমা ছাড়াও, তিনি বাংলা, তেলেগু, তামিল, কন্নড় এবং গুজরাটি সিনেমাতেও নিজের ছাপ রেখেছেন।
বাপ্পি লাহিড়ী এর জীবনী
পুরো নাম | অলোকেশ বাপ্পি লাহিড়ী |
ডাক নাম | বাপ্পি দা |
জন্ম | 1952 সালের 27 নভেম্বর |
জন্মস্থান | জলপাইগুড়ি, পশ্চিমবঙ্গ |
বয়স | 69 বছর (বছর 2022) |
মৃত্যুর তারিখ | 2022 সালের 16 ফেব্রুয়ারি |
পেশা | সঙ্গীতশিল্পী |
মৃত্যুর কারণ | স্বাস্থ্য সম্পর্কিত রোগ |
ধর্ম | হিন্দু |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
স্ত্রীর নাম | চিত্রানি লাহিড়ী |
জাতি | ব্রাহ্মণ |
অভিষেক চলচ্চিত্র | বাংলা (সঙ্গীত): দাদু (1974) হিন্দি (সঙ্গীত): ছোট শিকারি (1973) |
বেতন | প্রতি গানে 8-10 লক্ষ টাকা |
বাপ্পি লাহিড়ীর জন্ম ও পরিবার
বাপ্পি লাহিড়ী ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের জলপাইগুড়িতে 27 নভেম্বর 1952 সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাঙালি হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম অপরেশ লাহিড়ী এবং মাতার নাম বনসারি লাহিড়ী। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান ছিলেন বাপ্পি লাহিড়ী।
তার বাবা অপরেশ লাহিড়ী ছিলেন একজন প্রখ্যাত বাঙালি গায়ক এবং তার মা বনসারি লাহিড়ী শাস্ত্রীয় এবং শ্যামা সঙ্গীত কণ্ঠে প্রশিক্ষিত একজন সঙ্গীতজ্ঞ ছিলেন। তাঁর মাতামহ ছিলেন মহান গায়ক কিশোর কুমার এবং এস. মুখার্জি পরিবারের পক্ষ থেকে ছিলেন। যে কারণে ছোটবেলা থেকেই গানে পারদর্শী ছিলেন বাপ্পি দা।
বাপ্পি লাহিড়ী এর বিবাহজীবন
বাপ্পি লাহিড়ী ১৯৭৭ সালের ২৪শে জানুয়ারী চলচ্চিত্র প্রযোজক চিত্রানি লাহিড়ীর সাথে বিয়ে করেন। তাদের দুইজনের একটি ছেলে বাপ্পা লাহিড়ী এবং একটি মেয়ে রেমা লাহিড়ী রয়েছে। বর্তমানে বাপ্পীলাহিড়ীর দুই সন্তানই তাঁর বাবার মতো মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। তার মেয়ে রেমা একজন গায়িকা এবং তার ছেলে বাপ্পা একজন সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন।
আরও পড়ুন – আল্লু অর্জুন এর জীবনী
বাপ্পি লাহিড়ীর সংগীত জীবন
বাপ্পি লাহিড়ী একটি সঙ্গীতের পটভূমি সহ একটি পরিবার থেকে এসেছেন এবং প্রথম থেকেই তার বাবা-মায়ের দ্বারা সঙ্গীতে প্রশিক্ষণ পেয়েছিলেন। তিনি 3 বছর বয়সে তবলা বাজানো শুরু করেন। সঙ্গীতে ক্যারিয়ার গড়ার জন্য তিনি মুম্বাই চলে আসেন। একজন সঙ্গীতজ্ঞ হিসেবে তার প্রথম উদ্যোগ ছিল বাংলা চলচ্চিত্র দাদু।
সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে তার প্রথম বলিউড ছবি ছিল ‘নিনহা শিকারি’। যদিও ‘জখমি’ ছবিটি তার ক্যারিয়ারের সফলতা প্রমাণ করে। এ ছাড়া ‘চলতে চলতে’ চলচ্চিত্র থেকে সংগীত পরিচালক হিসেবেও পরিচিতি পান তিনি। পরবর্তীতে 80 এর দশকে তিনি বলিউড চলচ্চিত্র যেমন সাহাস, পেয়ারা দুশমান, আরমান, ভারদাত এবং অন্যান্য চলচ্চিত্রে চলচ্চিত্র সঙ্গীতে জনপ্রিয় ডিস্কো উপাদানটি যুক্ত করেন। মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গীতের সাথে তার সহযোগিতা দেশজুড়ে বেশ জনপ্রিয় ছিল।
বিশেষ করে ডিস্কো ড্যান্সারের গান সেই সময় অনেক বেশি ভাইরাল হয়েছিল। 180 টিরও বেশি গান রেকর্ড করার জন্য 1986 সালে ‘গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড’-এ বাপ্পি লাহিড়ীর নাম যুক্ত করানো হয়েছিল। তিনি তার কর্মজীবনে প্রায় 500টি চলচ্চিত্রের জন্য 5000টিরও বেশি গান করেছেন। তিনি কিছু বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের সঙ্গীতেও গান করেছেন। পিয়ানো, গিটার, তবলা, বঙ্গো, স্যাক্সোফোন ও ঢোলকের মতো যন্ত্রেও তার ভালো দক্ষতা ছিল।
বাপ্পি লাহিড়ী এর রাজনৈতিক জীবন
বাপ্পি লাহিড়ী ২০১৪ সালের ৩১ শে জানুয়ারী সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়ে বাপ্পি লাহিড়ী রাজনীতিতে যোগদান করেন। তিনি সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দল বিজেপিতে যোগ দেন।এবং বিজেপি তাকে শ্রীরামপুরের লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন। কিন্তু তিনি শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে বিপুল ভোটে পরাজিত হন।
মাইকেল জ্যাকসনের সাথে সাক্ষাৎ
ভারতীয় বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে বাপ্পি লাহিড়ী ছিলেন প্রথম গায়ক, যাকে মাইকেল জ্যাকসন তার প্রথম শোতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। মাইকেল জ্যাকসনের এই লাইভ শো 1996 সালে মুম্বাইতে অনুষ্ঠিত করা হয়েছিল। হিন্দি সঙ্গীতে পপ মিউজিক মেশানোর কৃতিত্ব দেওয়া হয়েছে বাপ্পি লাহিড়ীকে। এ কারণে তার অনেক সমালোচনা ও বিরোধিতাও করা হয়েছে।
বাপ্পি লাহিড়ী এর পুরস্কার
বাপ্পি লাহিড়ী শারাবি ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালকের ফিল্মফেয়ার পুরস্কারে ভূষিত হন। 1990 সালে ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়ানি জৈল সিংয়ের “থানেদার” ছবিটিও সেরা সঙ্গীত স্কোরের জন্য পুরস্কৃত হয়েছিল। এছাড়াও তিনি ডিস্কো ড্যান্সার চলচ্চিত্রের জন্য চায়না পুরস্কারে ভূষিত হন।
বাপ্পি লাহিড়ী এর মোট সম্পত্তি
আমরা যদি বাপ্পি লাহিড়ীর মোট সম্পদের কথা বলি, তবে একটি রিপোর্ট অনুসারে, তার প্রায় 22 কোটি টাকার সম্পদ ছিল। মুম্বাইতে তার একটি বিলাসবহুল বাড়ি ছিল যার দাম প্রায় 3.5 কোটি টাকা। তিনি বিলাসবহুল গাড়ি এবং সোনা পড়তে খুব পছন্দ করতেন। তার গলায় সবসময় ৭-৮টি সোনার চেইন থাকত।এছাড়াও বাপ্পি দা একটি ছবির একটি গানের জন্য 8-10 লক্ষ টাকা এবং শো-এর জন্য এক ঘন্টার জন্য 20-25 লক্ষ টাকা নিতেন।
বাপ্পি লাহিড়ীর মৃত্যু
সঙ্গীতশিল্পী এবং গায়ক হিসেবে বাপ্পি লাহিড়ী 80 এবং 90 এর দশকে ভারতে ডিস্কো সঙ্গীতকে এক অন্যান্য জনপ্রিয়তায় নিয়ে গিয়েছিলেন। ২০২২ সালের ১৫ই ফ্রেবুয়ারী সকাল বেলা মুম্বাইয়ের ক্রিটিকেয়ার হাসপাতালে মারা যান।তখন তাঁর বয়স হয়েছিল 69 বছর।